সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩১ অপরাহ্ন
মোঃ তরিকুল ইসলাম,ববি প্রতিনিধি॥ ক্লাসে পাঠদান ছাড়া প্রায় সব প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। উপাচার্য নেই ছয় মাস ধরে। নৈতিক স্থলনের দায়ে রেজিষ্ট্রার চাকরিচ্যুত হয়েছেন গত এপ্রিল মাসে । এতদিন উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন করা কোষাধ্যক্ষ মাহবুব হাসানের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ৭ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে গেছেন। এ অবস্তায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনে গভীর অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, প্র-উপাচার্য ট্রেজারার,রেজিষ্ট্রার শুধু এই চারটি পদই শূন্য আছে তাই নয়; বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধান পরিক্ষা নিয়ন্ত্রকের পদটিও দীর্ঘদিন ধরে খালি। ইতমধ্যেই অনার্স ভর্তি পরিক্ষা স্থগিত করা হয়েছে এবং এই ভর্তি পরিক্ষা কবে নেওয়া হবে, সে বিষয়ে জানে না কেউ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি অনুষদ থাকলেও ডিন ছিলেন মাএ দুইজন যার একজন চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে আছেন। একজন ডিন দিয়েই চলছে বিশ্ববিদ্যালয়। এতে প্রশাসনিক কার্যক্রম যেমন বন্ধ রয়েছে তেমনি শিক্ষার্থীদের সেমিষ্টার পরিক্ষা নেওয়াও অনিশ্চিত হয়ে পরেছে । বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন বিভাগে ছয় মাস থেকে এক বছর সেশনজট চলছে। এই অচলাবস্তা চলতে থাকলে সেশনজট আরো বাড়বে সন্দেহ নেই।
২০১৩ সাল থেকে শুরু করে ২০১৯ পর্যন্ত বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীরা পাঁচবার বড় ধরনের আন্দোলনে গিয়েছে। সেসব আন্দোলনের ফলে অনেকের অবস্থান পরিবর্তন হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবস্থা, ব্যাঘাত ঘটেছে তাদের পড়াশোনায়। বিভিন্ন আন্দোলনসহ অন্যান্য কারণে সৃষ্ট হওয়া সেশনজটের মাত্রা কিছু কিছু বিভাগে এক বছরেরও বেশি। সর্বশেষ ভিসি ড.ইমামুল হক বিরোধী আন্দোলনেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবস্থার পরিবর্তনে কিছু কিছু দাবি উঠেছিল। কিন্তু নানা কারণে সেগুলো পূরণ হয় নি। আর এখন বিভিন্ন সংকটে পর্যুদস্ত শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছে নতুন ভিসি নিয়োগের স্বল্পমাত্রার আন্দোলনে । ইতমধ্যেই শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করে দ্রুত উাপাচার্য নিয়োগের দাবি জিনিয়েছেন।
গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল আজিজ বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও রেজিস্ট্রার—এই তিনটি শীর্ষ পদ কীভাবে খালি থাকে? শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি কী করছে? আশাকরি আমাদের কথা চিন্তা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দ্রুত সদয় দৃষ্টি দেবেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি আরিফ হোসেন জানান, দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষ পদগুলো শূন্য থাকায় আমাদের শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশ ও নতুন সেমিস্টারের পাঠদানে বিগ্ন ঘটছে। এছাড়াও এ মাসের মধ্যে নতুন ভিসি নিয়োগ না হলে সকল শিক্ষক – কর্মকর্তা – কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে অমানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
ইতোমধ্যে সৃষ্ট হওয়া সংকট থেকে উত্তরণের পন্থা কি হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে এই শিক্ষক নেতা বলেন, দ্রুত ভিসি নিয়োগই হবে প্রথম সমাধান এবং খালি থাকা অন্য পদগুলোতে জনবল নিয়োগ দেওয়া হলে আমাদের সবার প্রচেষ্টায় উক্ত সংকট কাটিয়ে উঠা যাবে।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক সিন্ডিকেট সদস্য ও ইতিহাসবিদ সিরাজউদ্দীন আহমেদ এর সঙ্গে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, একটা বিশ্ববিদ্যালয় একদম চলছেই না কিন্তু সে ব্যাপারে উর্ধতনদের তড়িৎ কোনো সিদ্ধান্ত নেই এটা সত্যি বেদনার। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে যাবে যদি ভিসি নিয়োগের ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া না হয়।
নিয়মিত উপাচার্য না থাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে গা-ছাড়া ভাব বিরাজ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে উপাচার্য না থাকার সুযোগে আনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কোন নিয়মের তোয়াক্কা করছেন না। যা ইচ্ছা তাই করছেন। এ বিষয়ে তাদের তদারকি করার মতো কেউ নেই বলে জানান তিনি।
Leave a Reply